
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: গাজার আকাশে আবারও ছায়া নেমেছে—ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে একের পর এক আবাসিক এলাকা। চলমান সংঘাতের দুই বছরে এটিকে সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণ বলছেন বিশ্লেষকরা। সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, এবার ‘নজিরবিহীন শক্তি’ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি মুখপাত্র আভিচায় আদরাই এক ঘোষণায় গাজা নগরীর বাসিন্দাদের দ্রুত দক্ষিণে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উপকূলীয় রাস্তা আল-রাশিদ হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যেটিই বর্তমানে একমাত্র খোলা পথ। অথচ সেই পথও নির্ভরযোগ্য নয়—কারণ হামলার আওতা থেকে বাঁচতে পারছে না কোনো দিক।
ছিন্নভিন্ন বাস্তবতা, পায়ে হেঁটে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা
গাজার পশ্চিম দিকের উপকূলীয় এলাকায় যখন মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন, তখন চলছে লাগাতার বিমান হামলা। আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানালেন, তাল আল-হাওয়া অঞ্চলে বহু পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। রাস্তার পাশে বিশ্রামের সুযোগও নেই—কারণ, আকাশ থেকে নামছে আগুন।
৫০ বছর বয়সী নিভিন আহমেদ সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে ১৫ কিলোমিটার হেঁটে দক্ষিণের পথে রওনা দিয়েছেন। ক্লান্তিতে শিশু কেঁদে উঠেছে, আর প্রাপ্তবয়স্করা পালাক্রমে একটি ছোট গাড়ি টেনে নিচ্ছেন। “একপর্যায়ে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়েছে,” বলেন নিভিন।
নিরাপদ বললেও নিরাপদ নয় আশ্রয়স্থল
দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিকে ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত করা হলেও অতীতে সেখানেও বোমা পড়েছে। অনেকেই সেখানে গিয়ে আবারও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর তথ্যমতে, আগস্টের শেষ দিক থেকে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ গাজা নগরী ছেড়েছে। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, এখনো প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ আটকে আছেন উত্তর গাজায়।
নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, মানবিক বিপর্যয় তীব্রতর
শুক্রবার ভোর থেকে চালানো ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪৩ জন। এর মধ্যে গাজা নগরীতেই ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাল আল-হাওয়ার একটি ভবনে নিহত হন তিনজন বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে, দক্ষিণ গাজায় সাহায্য নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন আরও দু’জন।
আরেকটি হৃদয়বিদারক খবর এসেছে মধ্য গাজার আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল থেকে—অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে মাত্র ৯ বছর বয়সী এক শিশু। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে মারা গেছে অন্তত ৪৪১ জন মানুষ।
জ্বালানি সংকট : ৭২ ঘণ্টার মধ্যে থেমে যেতে পারে চিকিৎসা সেবা
টানা ১০ দিন ধরে গাজায় কোনো জ্বালানি প্রবেশ করেনি। হাসপাতালগুলো এখন কার্যত অচল হওয়ার পথে। ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়া জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার জ্বালানি মজুত রয়েছে। তার ভাষায়, “মানবিকতার প্রতিটি স্তরে এখন ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে।”