
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বাংলাদেশের অর্থনীতির সুরক্ষা ও উন্নতির জন্য প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থান, উন্নত জীবনের প্রত্যাশা কিংবা আরও ভালো সুযোগের খোঁজে বাংলাদেশি প্রবাসীরা প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান। তবে, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকটের মধ্যে রেমিট্যান্সের প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বর্তমানে ২৪ বিলিয়ন ডলার হলেও, এই আয় অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বিএমইটির তথ্যানুসারে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। যদি প্রতিটি প্রবাসী ৫০০ ডলার করে প্রতি মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠান, তবে বার্ষিক প্রবাসী আয় ৬০ বিলিয়ন ডলার হতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে, এর মাত্র ৪০ শতাংশই বৈধ পথে বাংলাদেশে আসছে, বাকি ৬০ শতাংশই চলে যাচ্ছে অবৈধ হুন্ডি চ্যানেলে।
সরকারের উদ্যোগ: রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির চেষ্টা
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের জন্য ২.৫ শতাংশ ইনসেন্টিভ প্রদান করছে, কিন্তু তা এখনও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আনতে সক্ষম হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেমিট্যান্স প্রেরণের হার বাড়ানোর জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর উৎসাহ প্রদান আরও জোরালো করতে হবে।
প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বল্পমেয়াদি কৌশল হতে পারে—প্রত্যেক দেশের জন্য আলাদা আলাদা ডলার-টাকা রেট নির্ধারণ। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশগুলির হুন্ডি রেট বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোতে টাকা-ডলার রেট নির্ধারণ করা যেতে পারে। এতে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হবেন, যা বৈধ অর্থপাচারে সাহায্য করবে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা : প্রবাসীদের কল্যাণে উন্নয়ন
লম্বা সময়ের জন্য, প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং বৈধ অভিবাসন চ্যানেল গড়ে তোলা। আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা পূরণ করতে পারলে, প্রবাসীরা আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হবেন। সরকার এবং দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে, যেন প্রবাসী শ্রমিকরা সহজে এবং নিরাপদে নিজেদের আয় দেশে পাঠাতে পারেন।
দীর্ঘমেয়াদি সুফল
প্রবাসী আয় পুরোপুরি ব্যাংকিং চ্যানেলে চলে আসলে, দেশের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এর ফলে আমদানি ব্যয়ের জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, দেশের অর্থপাচার কমে যাবে এবং দেশের উন্নয়নে সরাসরি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ যদি প্রবাসী আয় প্রবাহকে পুরোপুরি বৈধ চ্যানেলে আনতে পারে, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়বে, যা টাকার মূল্যও সুরক্ষিত রাখবে।
অর্থনীতির উন্নয়ন ও প্রবাসী কল্যাণে নতুন দিগন্ত
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রবাসী আয় যদি পুরোপুরি ব্যাংকিং চ্যানেলে চলে আসে, তবে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে। সরকার যদি প্রবাসীদের জন্য আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।