নিউজ ডেস্ক : মহান মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর ১০৭ তম জন্ম বার্ষিকী আগামী ১লা সেপ্টেম্বর-২৫ সোমবার। জন্মবার্ষিকী রাষ্ট্রীয় ভাবে পালনের দাবীতে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেছেন ভাসানী ওসমানী স্মৃতি সংসদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
২৮ অগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ডক্টর ইলিয়াস মিয়া এর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন ভাসানী ওসমানী স্মৃতি সংসদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জুলাইযোদ্ধা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বকুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন, সংসদের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার সুলতান চৌধুরী, সদস্য সৈয়দ রেজাউল করিম, সৈয়দ নূর আহমদ, তজবুর রহমান, মোঃ জাহিদু নূর।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, পৃথিবীর বুকে এবং ইতিহাস খ্যাত সমরবিদ তিন তিনটি যুদ্ধে যিনি বিজয় অর্জন করেছেন যথা- ১৯৩৯ ইং ২য় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যিনি সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। যিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা পৃথিবীর বুকে যাকে পাপা টাইগার হিসাবে পরিচিতি লাভ ও সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ঘাত-প্রতিঘাত অন্তর্নিহিত কোন্দল এবং ভারতের কুদৃষ্টি থেকে দেশ মাতৃকার প্রয়োজনে ৯ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করার ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি সেই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল. এম.এ.জি ওসমানী। বঙ্গবীর জেনারেল. এম.এ.জি ওসমানী ১৯১৮ সালে ১লা সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন হিমালয়ের অংশ মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে এক অনন্য উচ্চতায় সুনামগঞ্জ শহরস্থ তৎকালীন এস.ডি.ও তাঁর পিতা খাঁন বাহাদুর মফিজ রহমানের কর্মস্থলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ হযরত শাহজালাল রঃ ইয়েমেনি’র সহচর হযরত ওসমানী কুরেশীর বংশধর। বাংলাদেশ যার জন্ম হয়েছিল এক সাগর রক্তের বিনিময়ে-দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে। যে দেশের জন্মের পিছনে রয়েছে এক সুদীর্ঘ রক্তাক্ত ইতিহাস। যার প্রত্যক্ষ সর্বাধীনায়ক হচ্ছেন ক্ষণজন্মা পুরুষ বঙ্গবীর জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর এক অনন্য নাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সেই মহাপুরুষের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয় ভাবে কোনো দিন পালন করা হয়নি। অবহেলিত ভাবে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী অতিবাহিত হওয়ার কারণে চরম ভাবে বেদনাহত, মর্মাহত ও লজ্জা অনুভব করে। ১৯৭২ সালে তিনি নৌ ও বিমান মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নারায়নগঞ্জের চাষারায় বালুর মাঠে এক বিশাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ ও তৎকালীন সরকার প্রধান, মন্ত্রীবর্গ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জনতা তাকে বঙ্গবীর উপাধীতে অভিষিক্ত করে। এরপর থেকে তাকে বাংলাদেশের সরকার ও জনসাধারণ বঙ্গবীর উপাধীতে অভিষিক্ত করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা যিনি বাঘা সিদ্দিকি হিসেবে পরিচিত তিনি বঙ্গবীর উপাধী অন্যায় ভাবে ব্যবহার করে আসছেন। বঙ্গবীর জেনারেল. এম.এ.জি ওসমানীর ব্যবহৃত বঙ্গবীর উপাধী যাতে অন্য কোনো ব্যক্তি অন্যায় ভাবে ব্যবহার বা নামের সাথে বঙ্গবীর উপাধী ব্যবহার করতে না পারে তার বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বর্তমান সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ ইং হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সেক্টর কমান্ডারগণ একত্রিত হয়ে ও অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, তৎকালীন গণপরিষদের সদস্যগণ ও সামরিক অফিসারবৃন্দ যথা- মেজর জিয়া, মেজর শফি উল্লা, মেজর খালেদ মুশারফ, মেজর আবু উসমান চৌধুরী, মেজর সিআর দত্ত, মেজর মীর শওকত প্রমুখ গং। সে সভাতে তৎকালীন গণপরিষদের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীকে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য সর্বাধীনায়কের দায়িত্ব অর্পন করেন। জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী তার ব্যক্তিগত পিস্তল থেকে শূন্যে গুলি ছোড়ে পাকিস্থানীদের বিরোদ্ধে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিকতা ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ কুষ্টিয়া মুজিব নগর প্রবাসী সরকার গঠিত হলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ বঙ্গবীর জেনারেল. এম.এ.জি ওসমানীকে সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ, ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক সর্বস্থরের জনতার সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহীনির তথা সকল বাহীনির প্রধান হিসাবে সর্বাধীনায়কের দায়িত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার কার্যভার দেওয়া হয়। তিনি একটি জাতিকে পাহাড়ের উচ্চতার তুলে দিয়ে ১৯৮৪ সালে ১৬ই ফেব্রুয়ারী তিনি মৃত্যুবরণ করেন। যাবার পূর্বে নিজের সকল সহায় সম্পদ সবকিছু জন কল্যানে দান করে গেছেন। অকৃতদার চিরকুমার এই বীর তার কোনো উত্তরাধিকারীও রেখে যাননি। তবে রেখে গেছেন ৫৫ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন-সার্বভৌম একটি দেশ, বাংলাদেশ। রেখে গেছেন কোটি কোটি ভক্ত-অনুরাগী উত্তরাধিকারগণ। নতুন প্রজন্ম তার ১০৭ তম জন্ম বার্ষিকী এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে জুলাই-আগস্ট-২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় বিশ্বব্যাপী পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার দেশব্যাপী ও বঙ্গবীরের জন্ম ভূমি সিলেট, সুনামগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নিকট বিনীত ভাবে অনুরোধ জ্ঞাপন করছি।
নেতৃবৃন্দ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী বিশ্ববরণ্য ড. ইউনুস সরকারের নিকট এ দেশের ওসমানী ভক্ত স্বাধীনতা প্রিয় জুলাই-আগষ্ট ২০২৪এর গণবিপ্লবের চেতনার আলোকে এবং চেতনার আলোর উত্তরসূরী সকলের গণদাবী ক্ষণজন্মা এই বীর পুরুষের আগামী ১লা সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং ১০৭ জন্ম বার্ষিকী ও মৃত্যু বার্ষিকী সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের জন্য জোর দাবি জানান।
কার্যালয় : কাকলী শপিং সেন্টার (লিফটের ৫ম তলা), জিন্দাবাজার, সিলেট
ইমেইল : news.vorersylhet@gmail.com যোগাযোগ : 01621468454